
দেওয়ানগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু - প্রতিকি ছবি
সম্পাদকীয়
(জামালপুর দিনকাল)
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে পানিতে ডুবে দেড় বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু- একটি হৃদয়বিদারক সংবাদ। অতি অল্প বয়সে এমন মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, সমগ্র সমাজের জন্য এক বেদনাদায়ক ক্ষতি। পশ্চিম গামারিয়া গ্রামের সোহেল রানার শিশু পুত্র জিহান মিয়া খেলার ছলে বাড়ির পাশের ডোবার পানিতে পড়ে যায়; পরে উদ্ধার হয় তার নিথর দেহ। এমন অঘটন বারবারই আমাদের চোখে আঘাত করে, কিন্তু কার্যকর সচেতনতার অভাবে এর পুনরাবৃত্তি থামছে না।
বাংলাদেশে প্রতি বছর শত শত শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে, যেখানে বাড়ির আশপাশে পুকুর, খাল বা ডোবা অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকে, সেখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেশি। অভিভাবকদের সামান্য অসতর্কতা বা কয়েক মিনিটের অবহেলাই একটি পরিবারের জীবনে চিরস্থায়ী শোক ডেকে আনে।
এখানে দায় কেবল অভিভাবকদের নয়; স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, এমনকি সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে। প্রতিটি গ্রামের বাড়ির পাশে যদি ডোবা বা জলাশয় থাকে, সেখানে বেড়া দেওয়া, সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টানানো, কিংবা শিশুদের জন্য নিরাপদ খেলার স্থান তৈরি করা—এসব উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
একইসঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও শিশুদের জন্য “পানিতে সাবধানতা” বা “Water Safety” বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। ছোট বয়স থেকেই শিশুরা যদি পানির ভয় ও ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হয়, তবে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
জিহানের মৃত্যু আমাদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেয়- শিশুর নিরাপত্তায় কোনো অবহেলা চলতে পারে না। প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি সমাজ ও প্রশাসনের সমন্বিত পদক্ষেপই পারে ভবিষ্যতের এমন অকাল মৃত্যু রোধ করতে।
একটি শিশুর মৃত্যু যেন শুধু পরিসংখ্যান না হয়। জিহানের মৃত্যু আমাদের চোখ খুলে দিক— যেন আমরা বুঝতে পারি, শিশুর নিরাপত্তা মানে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা। সমাজ, প্রশাসন ও পরিবার— তিন স্তরের দায়িত্বশীল পদক্ষেপই পারে এমন অকাল মৃত্যু রোধ করতে।